ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে চলছে শেষ সময়ের প্রচারণা

এশিয়ার বৃহত্তম বার খ্যাত ঢাকা আইনজীবী সমিতির ২০১৯-২০ মেয়াদের নির্বাচন আগামী ২৭ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। দুই দিনব্যাপী এ নির্বাচনে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে । তবে দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকবে।

প্রতিবারের মতো এবারেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের নিয়ে গঠিত সাদা প্যানেল এবং বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের নিয়ে গঠিত নীল প্যানেল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। মোট ২৭ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ৫৭ জন প্রার্থী।

সাদা প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন— সভাপতি পদে গাজী মো. শাহ আলম এবং সম্পাদক পদে মো. আসাদুজ্জামান খান (রচি)।

সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে মো. হাবিবুর রহমান, সহ-সভাপতি পদে মো. জাহাঙ্গীর হোসেন দুলাল, ট্রেজারার পদে আব্দুল জলিল আফ্রাদ (কবির), সিনিয়র সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লা, সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে মোহাম্মদ ওমর ফারুক (আসিফ), লাইব্রেরী সম্পাদক পদে মো. আতাউর রহমান খান (রুকু), সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে শায়লা পারভীন পিয়া, দপ্তর সম্পাদক পদে মো: জাহিদুল ইসলাম (কাদির), ক্রীড়া সম্পাদক পদে মো. উজ্জল মিয়া, সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে হুমায়ুন কবির টগর।

সাদা প্যানেলের সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন— এ,এইচ এম শফিকুল ইসলাম মোল্লা (সোহাগ), আয়শা বিনতে আলী, হয়াথ আল মাহমুদ (ঝিকু), কাউসার হাসান, মাসুম মৃধা, মো. বাহারুল ইসলাম (বাহার), মো. হাসান আকবর আফজাল, মো. ইব্রাহিম হোসেন. মো. জুয়েল সিকদার, মো. মানুম মিয়া, মো: সব্বির হাসান, সাইফুল ইসলাম, সোহরাব হোসেন, তানভরি আহম্মেদ (সজীব)ও তুসার ঘোস,

নীল প্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন— সভাপতি পদে মো. ইকবাল হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে মো. হোসেন আলী খান।

সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে আব্দুস সালাম দেওয়ান, সহ-সভাপতি এ আর মিজানুর রহমান, ট্রেজারার পদে লুৎফর রহমান (আজাদ), সিনিয়র সহ-সাধারণ সম্পাদক নিহার হোসেন ফারুক, সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. ছাকায়েত উল্লাহ ভূইয়া (ছোটন), লাইব্রেরি সম্পাদক পদে জিয়াউল হক জিয়া, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মোশেদা খাতুন শিল্পী, দপ্তর সম্পাদক পদে জুলফিকার আলী হায়দার (জীবন), ক্রীড়া সম্পাদক পদে মো. মনিরুল ইসলাম (আকাশ), সমাজকল্যাণ সম্পাদক মাহবুব হাসান (রানা)।

নীল প্যানেলের সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন— আজাহার উদ্দিন (রিপন), কাজী রওশান দিল আফরোজ, এম আর কে রাসেল, মো. বাবুল আক্তার (বাবু), মো. ইব্রাহিম (খলিল), ইকবাল মাহম্মুদ সরকার, মাহাদি হাসান জুয়েল, রাসেদুল ইসলাম (রাসেল), মোহাম্মদ ইব্রাহিম (স্বপন), মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল, মোহাম্মদ ইয়াছিন মিয়া, ফারাহানা আক্তার (লুবনা), নজরুল হক শুভ, শাহিন সুলতানা (খুকি) ও সাদেকুল ইসলাম ভুইয়া (জাদু)।

গত ৩১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট মোখলেসুর রহমান বাদল ঢাকা আইনজীবী সমিতির বার্ষিক নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করেন।

নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টায় প্রার্থীদের পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হবে।

ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে আইনজীবীর সংখ্যা ২২ হাজার ২৪ জন হলেও বৈধ ভোটারের সংখ্যা ১৬ হাজার ১২৯ জন। এবার নতুন করে প্রায় ২ হাজার পাঁচশোর বেশি আইনজীবী তালিকাভুক্ত হয়েছেন। ফলে এবার ভোটারের সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ১৯ হাজারে।

নিবাচন কমিশনাররা হলেন: হাবিবুর রহমান, মাহবুবুর রহমান, আনিসুর রহমান, হাজী মোহাম্মদ মহসীন, রফিকুল ইসলাম শেখ, সাইফুল ইসলাম হেলাল, মকবুল হোসেন, নজরুল ইসলাম শামীম, এ কে এম তৌহিদুর রহমান, হাফিজুর রহমান, মতিউর রহমান ভুইয়া, আব্দুল খালেক মিলন, আহম্মদ উল্লাহ আমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, আনোয়ার শাহাদাত সাওন, বিনয় কুমার ঘোষ, আবুল কালাম আজাদ, শহীদ গাজী, শফিকুল ইসলাম এবং মোস্তফিজুর রহমান তালুকদার দিপু।

একতরফা ডিক্রি এবং ছানি মোকদ্দমা কি?

#একতরফা_ডিক্রি এবং ছানি মোকদ্দমাঃ
—————————————————
~দেশের কোনো আইনেই ছানি মোকদ্দমার সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা প্রদান করা হয়নি। এমনকি দেওয়ানি কার্যবিধিতেও এ সংক্রান্ত কোনো শব্দ নেই। ফলে প্রায়শই নানা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। সাধারণত কোনো মামলা একতরফাভাবে সম্পন্ন হলে সে মামলাটিকে অত্র আদালতে পুনরায় চালু করার পদ্ধতিকেই প্রথাগতভাবে ছানি মামলা বলা হয়। সুতরাং, ছানি মামলা বুঝতে হলে ‘একতরফা’ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা দরকার।

#একতরফা:
এখন প্রশ্ন হচ্ছে- একতরফা কী? একতরফা হচ্ছে আদালত কর্তৃক প্রদত্ত এক প্রকারের ডিক্রি। এখানে বলে রাখা ভালো যে, বাংলাদেশের আদালতের বিচারকৃত সিদ্ধান্ত দুই প্রকারের- ডিক্রি ও আদেশ। ‘মামলাটি বাতিল হয়েছে’- এ মর্মে প্রদত্ত কোনো আদেশ যদি ডিক্রিতে পরিণত হয় তবে সেটা আপিলযোগ্য। মামলা না চালানোর কারণে কোনো মামলা বা আপিল খারিজ হলে তা কোনো ডিক্রিতে পরিণত হয় না। মামলায় কোর্ট ফি অপরিশোধিত থাকার কারণে যদি আদালত আরজি প্রত্যাখ্যাত হওয়া মর্মে কোনে আদেশ প্রদান করে মামলা খারিজ করেন, তবে আরজি প্রত্যাখ্যাত হওয়া মর্মে প্রদত্ত আদেশটিতে ডিক্রির কার্যকারিতা থাকবে।

ওপরের সংক্ষিপ্ত আলোচনায় আমরা জানতে পারলাম একতরফা হচ্ছে আদালত কর্তৃক প্রদত্ত এক প্রকারের ডিক্রি। দেওয়ানি কার্যবিধির ৯নং আদেশের ৩নং বিধিতে বলা হয়েছে, আদালতে মামলা শুনানির জন্য ডাক পড়লে বাদী উপস্থিত, কিন্তু বিবাদী অনুপস্থিত থাকলে, সে ক্ষেত্রে আদালত মামলাটির একতরফা বিচার করতে পারেন। নির্ধারিত ধার্য তারিখে পক্ষগণ হাজির না থাকলে বা বাদী খরচ প্রদানে ব্যর্থ হলে অথবা বাদী নির্দিষ্ট সময়ে সমন না দিলে বা যথাসময়ে সমন জারি না হলে কিংবা শুনানির তারিখে অথবা মুলতবি শুনানির তারিখে পক্ষ হাজির না হলে ইত্যাদি কারণে আদালত বা আপিল আদালত মামলা খারিজ, ডিসমিস বা পারেন। একতরফা করতে পারেন। এ অবস্থায় উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে ওই আদেশ রদ বা রহিত করতে সংশ্লিষ্ট আদালতে দেওয়ানি কার্যবিধির ৯ আদেশের ৪ ও ১৩ নিয়মে, ৪১ আদেশের ১৯ ও ২১ নিয়মে প্রতিকারের জন্য প্রার্থিত মামলাকে ‘একতরফা মামলা’ বলে।

বাংলাদেশের প্রচলিত দেওয়ানি কার্যবিধি-১৯০৮-এর আদেশ ৯-এর নিয়ম ৬ এবং ৭; আদেশ ১৭-এর নিয়ম ২ এবং আদেশ ৪১-এর নিয়ম ১৭-তে একতরফা বিচার সম্পর্কে বিধান রয়েছে। আদেশ ৯-এর নিয়ম ৬ মোতাবেক যদি বিবাদী হাজির না হন এবং প্রমাণিত হয়, সমন সঠিকভাবে জারি করা হয়েছে সে ক্ষেত্রে আদালত একতরফাভাবে বিচার করতে পারেন। পাশাপাশি ১৭ আদেশের ২ নিয়মের বিধান মোতাবেক সময়ের প্রার্থনা মঞ্জুর হওয়ার পর ধার্য তারিখে বিবাদী হাজির না থাকলে আদেশ ৯-এর বিধান মোতাবেক একতরফা বিচার হবে। আদেশ ৪১-এর নিয়ম ১৭ মতে একতরফা আপিলের বিচার সম্পর্কে বিধান রয়েছে। এখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শুনানি মুলতবি হলে পরবর্তী তারিখে আপিলের শুনানির জন্য ডাক পড়লে আপিলকারী যদি হাজির না হন, তবে আদালত আপিল খারিজের আদেশ দিতে পারেন; যদি আপিলকারী হাজির হন কিন্তু প্রতিবাদী হাজির না হন, তবে একতরফা আপিলের শুনানি হবে।

‘একতরফা’- বিষয়ে মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ‘আইন শব্দকোষ’ গ্রন্থে মন্তব্য প্রদান করতে গিয়ে বলেছেন- ‘অন্যপক্ষের অনুপস্থিতিতে আদালত কর্তৃক বিচারে অগ্রসর হওয়া। কেবল আবেদনকারীর আর্জি শ্রবণ করে আদালত যখন কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করেন, তখন তা একতরফাভাবে করা হয়।’ বাংলাদেশে এ শব্দটির ব্যবহার প্রচলিত থাকলেও পৃথিবীর নানা দেশে এর পরিবর্তন হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে- ইংল্যান্ডে বর্তমানে ‘এক্সপারটি’ শব্দটির পরিবর্তে ‘উইদাউট নোটিস’ শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করা হয়।

আরজি উপস্থাপনের মাধ্যমে এখতিয়ারযোগ্য আদালতে মামলা রুজু করার জন্য দাখিল করতে হয়। ছানি মামলার আরজি দাখিলের দিন থেকেই মামলা রুজুর দিন ধরে নেয়া হয়। আরজি দাখিল ব্যতীত অন্য কোনো দিনই এ মামলা রুজুর দিন হিসেবে পরিগণিত হবে না। কেননা আমরা জানি বিচার প্রক্রিয়ায় যে কার্যক্রম আরজি দাখিলের মাধ্যমে শুরু হয় না, তাকে কোনোভাবেই মামলা বলা যেতে পারে না। যদি এ রকম কোনো কার্যক্রম রায় কিংবা ডিক্রির মাধ্যমে শেষ হয়।

আমাদের দেশের সকল দেওয়ানি মামলাই আরজি পেশের মাধ্যমে আদালতে দায়ের করতে হয় অথবা নির্ধারিত অন্য কোনো পদ্ধতিতে মামলাটি দায়ের করতে হয়। ছানি মামলা এক প্রকারের দেওয়ানি মামলা। তাই এ মামলাগুলো দেওয়ানি মামলার মতোই দায়ের করতে হয়। যে তারিখে আরজি দাখিল করা হয় সে তারিখেই মামলা শুরু হয়। আদালতে উক্ত ছানি মামলাকে রেজিস্ট্রিভুক্ত করা হয়। মজার বিষয় হচ্ছে, এ রেজিস্ট্রিভুক্তির সঙ্গে মামলা শুরু হওয়ার কোনো সম্পর্কই নেই। বিধান মোতাবেক মামলা খারিজ, ডিসমিস বা একতরফা হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি যথা- (১) বাদী আদালতের সন্তুষ্টি মতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোর্ট ফি বা সমন জারির ডাকমাসুল দিতে না পারায় অথবা হাজির না হওয়ার উপযুক্ত কারণ দর্শিয়ে; (২) শুনানির জন্য ডাকে বাদী হাজির না থাকলে কিন্তু বিবাদী হাজির থাকলে বাদী মামলা খারিজের আদেশ রদ করার জন্য শুনানির দিন বাদী অনুপস্থিত থাকার সন্তোষজনক কারণ দর্শিয়ে; (৩) বিবাদী শুনানির দিনে তার ওপর যথারীতি সমন জারি হয়েছে মর্মে সন্তোষজনক কারণ দর্শিয়ে যে আদালত মামলাটি খারিজ ডিসমিস বা একতরফা আদেশ প্রদান করেন সেই আদালতে একতরফা খারিজ আদেশের ৩০ দিনের মধ্যে খারিজ আদেশ বাতিল, রদ ও রহিত করে মূল আদেশ প্রার্থনা করতে হয়।

দেওয়ানি কার্যবিধির ৫ আদেশের ১-৩ মতে মামলার বিবেচনায় সমনের বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। একই নিয়মে ছানি মামলার ক্ষেত্রেও সমনের গুরুত্ব অপরিসীম। মূল মামলার বা ছানি মোকদ্দমায় সমন বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। প্রচলিত আইনের বিধান মোতাবেক যে সকল ক্ষেত্রে ছানি মামলা দায়ের করা যায়, সেগুলো হলো-
(১) বাদী খরচ না দেয়ায় সমন জারি না হয়ে থাকলে কিংবা কোনো পক্ষ হাজির না হলে; দেওয়ানি কার্যবিধির ৯ আদেশের ৪ বিধান অনুযায়ী ছানি মামলা করা যায়।
(২) সমন জারি না হয়ে ফেরত আসার পর বাদী ৩ মাস পর্যন্ত নতুন করে সমন দেয়ার আবেদন না করলে; যথা সময়ে সমন জারি হয়ে এসেছে প্রমাণ হলে এবং বাদী হাজির থাকলে এবং বিবাদী হাজির থাকে কিন্তু বাদী অনুপস্থিত থাকলে দেওয়ানি কার্যবিধির ৯ আদেশের ৯ নিয়ম অনুযায়ী ছানি মামলা করা যায়।
(৩) কোনো সন্তোষজনক কারণ ছাড়াই আদালতের নির্দেশিত ব্যক্তি আদালতে উপস্থিত না হলে; দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের ৯ আদেশের ১৩ নিয়ম মতে ছানি মামলা করা যায়।
(৪) নির্ধারিত তারিখে শুনানি মুলতবি হয়ে থাকলে পরবর্তী তারিখে আপিল শুনানির জন্য ডাক পড়লে আপিলকারী হাজির না থাকলে; আপিল শুনানির ধার্য তারিখে বা শুনানি মুলতবি তারিখে প্রতিপক্ষ হাজির না থাকলে; আপিলকারী প্রতিপক্ষের ওপর নোটিস জারি করার জন্য আদালত কর্তৃক নির্ধারিত অর্থ আদালতে জমা না দিলে; দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের ৪১ আদেশের ১৯ ও ২১ নিয়মে ছানি মোকদ্দমা করা যায়।

মামলা পুনরুজ্জীবিত করার বেশ কিছু বিধান রয়েছে। দেওয়ানি কার্যবিধির আদেশ ৯, নিয়ম ৪; আদেশ ৯, নিয়ম ৯ ও ৯ক এবং আদেশ ৯ নিয়ম ১৩ এর বিধান মতে মামলা পুনরুজ্জীবিত করার বিধান রয়েছে।